যেখানে বিনিয়োগ সবচেয়ে নিরাপদ, লাভও সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি - My Blog

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ কর কর্তন করে সরকার। অন্যদিকে কেউ যদি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেন, তাহলে মুনাফা থেকে কর কর্তন করা হয় ৫ শতাংশ। আবার মুনাফার টাকাও পাওয়া যায় ছয় মাস অন্তর। আর ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এ বন্ডে বিনিয়োগকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। অন্যান্য বন্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের একটি ঊর্ধ্বসীমা থাকে। কিন্তু ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। তাই এ বন্ডে আপনি যত খুশি তত বিনিয়োগ করতে পারবেন।

বিনিয়োগের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবেন
বর্তমানে ব্যাংক বা পুঁজিবাজার থেকে ট্রেজারি বন্ড কেনার সুযোগ রয়েছে। তবে সব ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড বিক্রয় করে না। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত ডিলার ব্যাংকই ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। তাই বিনিয়োগের আগে খোঁজ নিতে হবে, যে ব্যাংকে আপনার হিসাব রয়েছে, ওই ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে কি না। যদি না করে, তাহলে যে ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে, সেই ব্যাংকে হিসাব খুলে বন্ড কিনতে হবে। আর শেয়ারবাজার থেকে বন্ড খোলার ক্ষেত্রে আপনার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে যেভাবে শেয়ার কেনা হয়, একইভাবে ট্রেজারি বন্ডও কেনা যায়।

তাই আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আপনি ব্যাংক নাকি পুঁজিবাজার থেকে ট্রেজারি বন্ড কিনবেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু ১০০ টাকা অর্থাৎ আপনি চাইলে ১০০ টাকাও বিনিয়োগ করতে পারবেন একটি ট্রেজারি বন্ডে। তবে ব্যাংক থেকে কেনার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। ব্যাংক থেকে ন্যূনতম এক লাখ টাকার ট্রেজারি বন্ড কিনতে হয়। তাই আপনি যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হন, তাহলে আপনার জন্য পুঁজিবাজার থেকে বন্ড কেনা ভালো। আপনি যদি অনাবাসী বাংলাদেশি হন, তাহলে ব্যাংক থেকে বন্ড কেনা আপনার জন্য সহজ। এতে আপনি আপনার বিনিয়োগের অর্থ ও মুনাফা ডলারে ফেরত নিতে চাইলে সহজেই তা ফেরত নিতে পারবেন।

ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ ও মুনাফার হার
সাধারণত ট্রেজারি বন্ড বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। যেমন ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি। তাই আপনি আপনার সুবিধামতো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে মুনাফার হার বেশি। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন মেয়াদি প্রায় ২৫০টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে মুনাফাকে বলা হয় ‘কুপন হার’। নির্ধারিত এই কুপন হার অনুযায়ীই মিলবে মুনাফা।

ধরুন, আপনি ১০ বছর মেয়াদি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের একেকটি ট্রেজারি বন্ড কিনেছেন ১০৫ টাকায়। আপনি মোট ১ লাখ ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১ হাজারটি বন্ড কিনেছেন। এসব বন্ডের কুপন হার ৯ দশমিক ৫০। তাহলে ছয় মাস পর মুনাফা পাবেন ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। বছরে পাবেন ৯ হাজার ৫০০ টাকা।

ট্রেজারি বন্ডের সুবিধা
বিনিয়োগের পর আপনার যেকোনো সময় টাকার দরকার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির আগেই আপনি নগদায়ন করতে পারবেন। আপনি যদি ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বন্ড কিনে থাকেন, তাহলে যে ব্যাংক থেকে বন্ড কিনেছেন, ওই ব্যাংক থেকেই নগদায়ন করতে পারবেন। আর যদি পুঁজিবাজার থেকে কিনে থাকেন, তাহলে পুঁজিবাজারে যেকোনো সময় বিক্রয় করে বিনিয়োগ করা টাকা তুলে নিতে পারবেন। পুঁজিবাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে বাজারমূল্যেই তা বিক্রি করতে হবে আপনাকে।

সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। তার আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে মুনাফার হার কিছুটা কমে যায়। কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে আপনি যদি মেয়াদের আগে নগদায়ন করেন, তাহলে কুপনে যে হার উল্লেখ আছে, ওই হারেই মুনাফা মিলবে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *